তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত | তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম Tahajjud namajer niyom
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত | তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম Tahajjud namajer niyom


তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত


পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জত নামাজের বিশেষ তাগিদ করা হয়েছে। তা নিম্নে উল্লেখিত হলো:
তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। (সূরা আয-যারিয়াত আয়াত-১৭-১৮)


আল কোরআনের সূরা আল মুজাম্মিলে উল্লেখ করা হয়েছে, অবশ্য রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর। এবং সে সময়ে কুরআন পাঠ বা জিকির করা একেবারে যথার্থ।
সূরা আল ফুরকানের ৬৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে। আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।



তাহাজ্জুদ নামাজ কিভাবে পড়বো?


তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ম হচ্ছে দুই রাকাত দুই রাকাত করে যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে পড়া। কেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারও কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি পড়া কর্তব্য। রমজান ছাড়া অন্য সময় মাঝেমধ্যে জামাতে পড়া জায়েজ আছে তবে নিয়মিতভাবে নয়।



তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, অনুগত, আল্লাহর পথে ধনসম্পত্তি উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী। (সূরা আল ইমরান আয়াত-১৭)

ফরজ নামাজের পর অন্যান্য সুন্নত ও নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সবচেয়ে বেশি। (আহমদ, মিশকাত পাতা-১১০)


ফজিলত

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেন, আমাদের প্রভূ পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়াতা’য়ালা, প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন ( যা আমরা দেখতে পাই না) যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের”কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তাই দিব। কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। (মুসলিম মিশকাত-পাতা-১০৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে, এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামাজ পড়ায়, এমনকি স্ত্রী যদি জেগে না ওঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয়, তাহলে তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষণ করে থাকেন।


তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত এবং নিয়ত কি?


তাহাজ্জুদ নামাজ কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত পড়েছিলেন। তাই রোজাদার ব্যক্তির তাহাজ্জুদ নামাজ কমপক্ষে ৪ রাকাত আদায় করা উচিত। কিন্তু যদি কেউ এ নামাজ ২ রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তাঁর তাহাজ্জুদ আদায় হবে।


অনুরূপ কোন মহিলা যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুত নামাজ পড়ে, এবং সে তার স্বামীকে নামাজের জন্য জাগায়, এমনকি স্বামী জেগে না ওঠে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়, তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়, তাহলে তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে। (মুসলিম, মিশকাত-পাতা-১০৯, নাসাঈ)


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় নামাজ, হযরত দাউদ (আঃ) এর নামাজ। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন। এবং রাতের তৃতীয় ভাগে নামাজে দাঁড়াতেন। আর ষষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমাতেন।

কেয়ামতের ভয়াবহ বিপর্যয় ও কঠিন হিসাব নিকাশের দিবসে, কোন ব্যক্তি যদি সহজ হিসাব কামনা করে। তবে তার উচিত হবে। নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া। শ্রেষ্ঠতম মুফাসসিরে কোরআন, আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি হাশরের ময়দানে সহজ হিসাব কামনা করে।

তার উচিত হবে আল্লাহর যেন তাকে রাতের অন্ধকারে সেজদারত ও দাড়ানো অবস্থায় পান। তার মধ্যে পরকালের চিন্তা ও রহমতের প্রত্যাশাও থাকা দরকার। (তাফসীরে কুরতুবী, মারেফুল কোরআন, কিয়ামুল লাইল)



তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর:


প্রশ্ন-১: তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল?


উত্তর: তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা নফল। বিশুদ্ধ হাদিসের বর্ণনা জানা যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ 4 রাকাত পড়তেন কখনো 6 রাকাত পড়েন ৮ রাকাত আবার কখনো 12 রাকাত পড়তেন।


প্রশ্ন-২: তাহাজ্জুদ নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?

উত্তর: তাহাজ্জত নামাজ পড়ার নিয়ম হচ্ছে দুই রাকাত দুই রাকাত করে যথাসম্ভব লম্বা লম্বা রুকু-সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে পড়া। কেরাত উঁচু-নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারো কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি পড়া কর্তব্য। রমজান ছাড়া অন্য সময় মাঝেমধ্যে জামাতে পড়া জায়েজ আছে। তবে নিয়মিতভাবে নয়।


প্রশ্ন-৩: তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?


উত্তর: নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাহাজ্জুদ নামাজ কখনো ৪ রাকাত কখনো ৮ রাকাত এবং কখনো 12 রাকাত পড়েছেন। তাই রোজাদার ব্যক্তির তাহাজ্জুদ নামাজ কমপক্ষে ৪ রাকাত আদায় করা উচিত। কিন্তু কেউ তাহাজ্জুদ  নামাজ ২ রাকাত আদায় করেন তাহলেও তার তাহাজ্জুদ আদায় হবে।


প্রশ্ন-৪: তাহাজ্জুদ নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়?


উত্তর: অন্যান্য নফল/ফরজ নামাজের মতই সূরা ফাতিহার পরে যে কোন সূরা পাঠ করতে পারেন। অথবা কোরআনের যেকোনো কমপক্ষে তিন আয়াত পাঠ করতে পারেন। নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই।


প্রশ্ন-৫: তাহাজ্জুদ নামাজ কি প্রতিদিন পড়তে হয়?


উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজ ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। তবে প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে, আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করা যায়। নফল নামাজ আপনি চাইলে পড়তে পারেন। চাইলে ছাড়তেও পারেন। তবে প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত রয়েছে।


প্রশ্ন-৬: তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয়?


উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজ অন্ধকারে পড়তে হয়। অর্থাৎ রাত ২ পর থেকে নিয়ে ফজরের নামাজের আজানের আগ পর্যন্ত পড়া যায়।


প্রশ্ন-৭: তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কি হয়?


উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজের সময় স্বয়ং আল্লাহ পাক, প্রথম আকাশে এসে বান্দাকে তার প্রয়োজনের কথা বলে বলে ডাকতে থাকেন। কোন ব্যক্তি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করেন। সম্মানিত স্থান দান করেন। তাহাজ্জুদ নামাজের আরো অনেক ফজিলত রয়েছে ।


উপসংহার: গর্বিত মুসলিম উম্মাহ, আমরা আজকের এই বহুল আলোচিত পোস্টে আলোচনা করেছি। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, বাংলা নিয়ত, সুরা, সময়, ফজিলত সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে যেগুলো আপনি সম্পূর্ণ পড়লে অনেক বেশি উপকৃত হতে পারবেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি আপনার যেকোন সম্পর্কিত প্রশ্ন আমাদের কমেন্ট বক্সে করুন ধন্যবাদ।


তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা
তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া
তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজাত
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত,তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম,তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম,তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত,তাহাজ্জুদ নামাজের সময়,তাহাজ্জুদ নামাজ,তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত,তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ত,তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত,তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত,তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব,তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত,তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত,তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত না নফল,তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম মিজানুর রহমান আজহারী,তাহাজ্জুদ নামাজ কি সুন্নত না নফল