আরাফা দিবস কোনটি?বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানের মুসলিমগন কোন দিন আরাফার সিয়াম পালন করবে?
প্রশ্ন:আরাফা দিবস কোনটি?বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানের মুসলিমগন কোন দিন আরাফার সিয়াম পালন করবে?
আরাফার রোজা কোন্ দিন রাখতে হবে, তা নিয়ে আলিমগণের মাঝে দুটি মত রয়েছে।তবে অধিকাংশ ওলামাদের মতে হাজীগন যেদিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করবেন সেটাই আরাফাত দিবস।তাই আরাফার দিবসে সিয়াম পালন করতে হবে এটাই সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং জমহুর ওলামাদের বিশুদ্ধ মত।কারন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আরাফা দিবসের (يوم عرفة) সিয়ামের ব্যাপারে আল্লাহর নিকট আশা করি তিনি এর মাধ্যমে সিয়াম পালনকারীর পূর্বের এক বছরের এবং পরের এক বছরের পাপ মোচন করে দিবেন (সহীহ মুসলিম, হা/১১৬২; মিশকাত, হা/২০৪৪;সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬৩২, ইরওয়া ৯২৫,সহীহ আত্ তারগীব ১০১৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৩৫বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৯৪১, ৪/২৫০-৫১ পৃ.)।
.
আমরা জানি, আগামী ৮ জুলাই,২০২২ শুক্রবার হাজিগণ আরাফার মাঠে অবস্থান করবেন। তাই, বাংলাদেশ, ভারত,পাকিস্তানের অধিবাসীরাও আগামী ৭ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে সাহরি খেয়ে ৮ জুলাই,শুক্রবার আরাফার রোজা রাখবে। এটি সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি,গত শতাব্দীর শীর্ষ আলিম শায়খ আবদুল আযিয ইবনু বায (রাহ.)-সহ অনেক আলিমের বিশুদ্ধ মত।সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড লাজনা দায়িমা এবং মিসরের ফতোয়া বোর্ড দারুল ইফতার মতামতও এমন।যেমন শাইখ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর তত্ত্বাবধানে সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া বোর্ড আরাফার দিন সম্পর্কে বলেছে, يوم عرفة هو اليوم الذي يقف الناس فيه بعرفة ‘যেদিন হাজীগণ আরাফার মাঠে অবস্থান করেন সেটা আরাফার দিন’ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ১০/৩৯৩ পৃ.)। বোর্ড এই বক্তব্যকেই প্রাধান্য দিয়েছে । বোর্ড আরো উল্লেখ করেছে যে, ‘কেউ চাইলে আগে বা পরেও রাখতে পারে’ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ১০/৩৯৩ পৃ.)। শাইখ সুলায়মান আর-রুহায়লী বলেন, ‘এই দিনটা আরাফার মাঠের সাথে সম্পৃক্ত। আর আরাফার মাঠ অন্যান্য দেশে নেই, এটা সঊদীতে অবস্থিত। তাই সম্ভব হলে এ দিনেই সিয়াম রাখবে। যদি এই দিনটি অন্যদের ঈদের দিনের সাথে মিলে যায়, তবে তারা আগের দিন রাখবে’
.
অপর দিকে শাইখ ইবনে উছায়মীন ও ইবনু জিবরিন (রাহ.)।হানাফি মাযহাবের মতানুসারে তারা বলেন,
হাদিসে বর্ণিত ‘আরাফার দিন’ দ্বারা মূলত যিলহজ্জের ৯ তারিখ বুঝানো হয়েছে তাই নিজ নিজ দেশের চাঁদের হিসাব অনুযায়ী জিলহজের ৯ তারিখে আরাফার রোজা রাখতে হবে। তবে এটি হাদীস অনুযায়ী শক্তিশালী মত নয়।
.
গত শতাব্দীর শীর্ষ আলিম শাইখ ইবনে উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘চাঁদের বিষয় নিয়ে আলেমদের মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। তিনি অন্যান্য সিয়ামের মত আরাফার সিয়ামকেও নিজ নিজ দেশের ৯ তারিখ অনুযায়ী রাখার মতকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং আম দলীল পেশ করেছেন’ (ইবনে উছায়মীন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ২০তম খণ্ড, পৃ. ২৮)।
.
উভয় মতের পক্ষে আরো আলোচনা আছে।বিস্তারিত বর্ণনাসহ আমার যিলহজ্জ ও কুরবানী সম্পর্কে আমার ধারাবাহিক ১০ পর্বের ৯ পর্বে সকল মতামত তুলে ধরে একটি ভারসাম্যপূর্ণ আলোচনা আসবে ইনশাআল্লাহ সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ রইল। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)